
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তদন্তে বড়সড় অগ্রগতির খবর পাওয়া গেছে। চাঞ্চল্যকর এই হামলার মূল অভিযুক্ত শুটার ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী এলাকার একটি পুকুর থেকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি। মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে র্যাব।
র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদী জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর থেকেই মূল শুটার ফয়সাল ও তার সহযোগীরা পলাতক ছিলেন।
প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে যে ফয়সালের পরিবারের সদস্যরা নরসিংদীতে অবস্থান করছেন এবং হামলার আলামত সেখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এই তথ্যের সূত্র ধরেই ফয়সালের শ্বশুরবাড়ি এলাকায় অভিযান চালায় র্যাবের একটি চৌকস দল। অভিযানের একপর্যায়ে ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবিরকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি অস্ত্রের সন্ধান দেন। তার দেখানো মতে স্থানীয় একটি পুকুরে তল্লাশি চালিয়ে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গত ১২ ডিসেম্বর পুরানা পল্টনে হাদির ওপর হামলায় এই অস্ত্রগুলোর কোনো একটি ব্যবহার করা হয়েছিল। উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে গত শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় এক ভয়াবহ হামলার শিকার হন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম পরিচিত মুখ শরিফ ওসমান হাদি। জুমার নামাজের পর তিনি নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি রিকশায় চড়ে বিজয়নগর এলাকা অতিক্রম করছিলেন। সে সময় মোটরসাইকেলে করে আসা দুই দুর্বৃত্ত তার রিকশার গতি রোধ না করেই চলন্ত অবস্থায় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা ব্যক্তিটি খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।এই ঘটনার পর থেকেই ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী মোটরসাইকেল চালক আলমগীরের নাম ও ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায় পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে শুটার ফয়সাল নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। ঘটনার পরপরই ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক এবং এক বান্ধবীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এবার তার বাবার গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে মামলার তদন্ত নতুন মোড় নিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা ফয়সাল ও তার সহযোগীরা দেশত্যাগের চেষ্টা করতে পারে অথবা সীমান্তবর্তী কোনো জেলায় আত্মগোপনে থাকতে পারে। তাদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং অবিলম্বে মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের দাবি তোলা হয়েছে। সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেছেন যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই ঢাকা-৮ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে র্যাবের এই সফল অভিযানের ফলে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও মূল আসামি ফয়সাল গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত শঙ্কা কাটছে না। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গ্রেপ্তারকৃত হুমায়ুন কবিরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এই মামলায় তাদের আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তারা আশাবাদী যে খুব দ্রুতই এই হামলার পেছনের মূল ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা সম্ভব হবে।