বিনোদন ডেস্ক

শীত মানেই নরম রোদে আলস্য মাখা সকাল, গরম কফির কাপ আর মোটা সোয়েটারের আরাম। কিন্তু এই শীতের নীরব সৌন্দর্যের মাঝেই লুকিয়ে থাকে এক অদৃশ্য শত্রুÑ শুষ্কতা। ঠাণ্ডা হাওয়া, ঘরের গরম পরিবেশ, কম আর্দ্রতা ও পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার ফলে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়, চুল হারায় উজ্জ্বলতা, আর হাত-পা ফেটে যায়। ফলে শীত যতই প্রিয় হোক না কেন, সঠিক যত্ন ছাড়া তা হয়ে ওঠে অস্বস্তিকর। তাই এই সময় দরকার একটু বাড়তি মনোযোগ, একটু নিজেকে ভালোবাসাÑ যাতে মৌসুমজুড়ে আপনি থাকেন সতেজ, আত্মবিশ্বাসী ও সুন্দর।

বিউটি এক্সপার্ট আফরোজা পারভীন বলেন, ‘শীতকালে নিজের যত্ন নেওয়া মানেই হলো আর্দ্রতা ধরে রাখা। পানি কম খাওয়ার অভ্যাস শীতের সবচেয়ে বড় ভুল। ত্বক বা চুলÑ দুটিরই সৌন্দর্য আসে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড থাকলে। দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি খান, খাদ্যতালিকায় অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও শাকসবজি রাখুন। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ, হাত, পা ও ঠোঁটে হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এ ছাড়া চুলে নিয়মিত তেল ম্যাসাজ ও প্রোটিন মাস্ক ব্যবহার করলে শীতের ক্ষতি সহজেই সামলে নেওয়া যায়।’

ত্বকের যত্ন

শীতকালে ত্বক সবচেয়ে বেশি রুক্ষ হয়। এই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক থেকে দ্রুত পানি হারায় এবং ত্বক হয়ে পড়ে টানটান ও খসখসে। তাই প্রতিদিনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। ত্বক পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দিনে দুবার মুখ ধুয়ে হালকা হাতে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এমন প্রডাক্ট বেছে নিন যাতে শিয়া বাটার, অ্যালো ভেরা, গ্লিসারিন বা হায়ালুরোনিক অ্যাসিড আছে- এগুলো ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। অনেকেই মনে করেন শীতে সানস্ক্রিনের দরকার নেইÑ এটি ভুল ধারণা। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি শীতেও ত্বককে পুড়িয়ে দেয়, তাই বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

ঘরে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। অনেকেই ঠাণ্ডার কারণে পানি কম খান, অথচ এটি ত্বকের অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়। এ ছাড়া সপ্তাহে একদিন হালকা এক্সফোলিয়েশন করলে মৃত কোষ দূর হয়ে ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ ও উজ্জ্বল। চাইলে সপ্তাহে একবার প্রাকৃতিক হোমমেড ফেস প্যাক ব্যবহার করতে পারেনÑ যেমন ১ চামচ মধু, ১ চামচ দই, আর অল্প ওটমিল মিশিয়ে তৈরি প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক থাকবে নরম ও হাইড্রেটেড।

ত্বক যদি অতিরিক্ত শুষ্ক হয়, তাহলে কলা, মধু ও কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্যাক লাগানো যেতে পারেÑ এটি গভীর ময়েশ্চারাইজ দেয়।

চুলের যত্ন

শীতের ঠাণ্ডা বাতাস চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে দেয়, ফলে চুল হয় রুক্ষ, নিস্তেজ ও ভঙ্গুর। তাই চুলের যত্নে নিয়মিত তেল দেওয়া অপরিহার্য। নারকেল, অলিভ বা বাদাম তেল হালকা গরম করে সপ্তাহে দুবার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং শুষ্কতা কমবে।

শ্যাম্পু করার সময় গরম পানি নয়, বরং কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত গরম পানি স্ক্যাল্পের তেল শুষে নিয়ে চুলকে আরও শুষ্ক করে তোলে। শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন, আর সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার ডিপ কন্ডিশনিং বা হেয়ার মাস্ক দিন।

স্টাইলিং টুল যেমন হেয়ার ড্রায়ার, কার্লার, স্ট্রেইটনার যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে ব্যবহার করলে অবশ্যই হিট প্রটেকশন স্প্রে লাগান। শীতে বাইরে বের হলে চুল ঢেকে রাখুনÑ ঠাণ্ডা বাতাস সরাসরি চুলে লাগলে ফ্রিজি ও ড্যামেজড হয়ে যায়।

সপ্তাহে একদিন প্রাকৃতিক হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে চুলের প্রাণ ফিরে আসে। যেমন ডিমের সাদা অংশ, দই ও অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুনÑ এটি প্রোটিন ট্রিটমেন্ট হিসেবে কাজ করে। আবার চুল যদি খুব শুষ্ক হয়, তাহলে পাকা কলা, মধু ও নারকেল তেলের মিশ্রণ দারুণ ফল দেয়।

চুলে স্ক্রাবিংয়ের প্রয়োজন নেই, তবে সপ্তাহে একদিন স্ক্যাল্পে অল্প মিহি কফিগুঁড়ো ও নারকেল তেলের মিশ্রণ ম্যাসাজ করলে মৃত কোষ দূর হয় ও চুলের গোড়া পরিষ্কার থাকে।

হাত ও পায়ের যত্ন

শীতকালে হাত ও পায়ের ত্বক সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হয়। অথচ শরীরের সবচেয়ে দৃশ্যমান অংশের মধ্যে এগুলোই অন্যতম। ঠাণ্ডা বাতাস, ডিটারজেন্ট বা পানির সংস্পর্শে এসে হাত হয়ে পড়ে রুক্ষ ও ফাটা, পায়ের গোড়ায় দেখা দেয় ফাটল ও খসখস ভাব। হাত-পায়ের যত্নের প্রথম ধাপ হলো ময়েশ্চারাইজিং। প্রতিবার হাত ধোয়ার পর হ্যান্ডক্রিম ব্যবহার করুন। রাতে ঘুমানোর আগে পা ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে পায়ের গোড়ায় পেট্রোলিয়াম জেলি বা ঘন বডি বাটার লাগিয়ে মোজা পরে নিনÑ সকালে পা থাকবে নরম ও মসৃণ। এ ছাড়া সপ্তাহে একদিন গরম পানিতে সামান্য লবণ বা দুধ মিশিয়ে ১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখলে মৃত কোষ নরম হয়ে যায়। এরপর হালকা পামিস স্টোন দিয়ে ঘষে নিন, তারপর লাগান পুষ্টিকর লোশন বা ক্রিম। হাতের যত্নে গ্লিসারিন ও লেমন জুসের মিশ্রণও বেশ কার্যকরÑ এটি ত্বককে উজ্জ্বল রাখে ও ফাটা ভাব দূর করে। সপ্তাহে একদিন হ্যান্ড অ্যান্ড ফুট স্ক্রাব ব্যবহার করুন। সামান্য চিনি ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে তৈরি করা ঘরোয়া স্ক্রাব হাত-পায়ের রুক্ষতা দূর করে। পায়ের যত্নে মধু ও দই মিশিয়ে প্যাক লাগালে ফাটল নরম হয়, আর হাতের জন্য অ্যালোভেরা জেল ও গোলাপজল চমৎকার প্রাকৃতিক হাইড্রেটর হিসেবে কাজ করে।