নান্দাইল উপজেলা প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের নান্দাইলে মসজিদের খতিব নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দে পুলিশের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ২টার দিকে নান্দাইল পৌরসভার বালিয়াপাড়া মহল্লার উত্তর বালিয়াপাড়া জামে মসিজদের সামনে এ ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। বর্তমানে এলাকাটিতে থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং ঘটনাস্থলে দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরজমিন পরির্দশনে জানাগেছে, বিগত ৩৫ বছর যাবত উত্তর বালিয়াপাড়া জামে মসজিদে খতিব হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন ওই মহল্লার ইমাম মাও. আবুল খায়ের। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ পূর্বে ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি রোস্তম আলী নতুন খতিব নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেন। পরবর্তীতে ৩রা সেপ্টেম্বর মাও. মুফতি আনোয়ারুল হককে খতিব হিসাবে নিয়োগ দেন। তবে এলাকার মুসুল্লীরা পূর্বের খতিব মাওলানা আবুল খায়েরকে খতিব হিসাবে দায়িত্বে বহাল রাখতে গেলে দুইটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে গোলাযোগ সৃষ্টি হলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার উভয় পক্ষের বক্তব্য পর্যালোচনা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পুর্বের খতিবকে বহাল রাখার লিখিত নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে শুক্রবার মাও. আবুল খায়ের মসিজদে নামাজ পড়তে যান। এসময় নতুন খতিব মাও. মুফতি আনোয়ারুল হক জুম্মাহর প্রাক্তন খতিবকে দেখে তিনি বয়ান থেকে সরে যান। পরে মাও: আবুল খায়ের বয়ান করলেও তিনি ইমামতি না করে তাঁর ছেলেকে দিয়ে নামাজ পড়িয়েছেন। জুম্মাহর নামাজ শেষে নবনিযুক্ত খতিব বের হওয়ার সময় এলাকার মুসুল্লীদের সাথে তর্কবির্তক শুরু হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি তর্কবিতর্কের মাধ্যমে তুমুল সংঘর্ষ ঘটে। এতে মাও. আবুল খায়ের পক্ষের লোক মাসুম, গেন্দু মিয়া, কামরুজ্জামান, মফিজুর রহমান ও বাহাদুর মিয়া এবং সভাপতি রোস্তম আলীর পক্ষে আব্দুল হালিম, মোফাজ্জল হোসেন, আবুল হোসেন, আবু তালেব সহ একজন মহিলাও আহত হয়। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদের নির্দেশে তিন রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হয়। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি।
এ বিষয়ে প্রাক্তন খতিবের পক্ষে মুসুল্লী মোশারাফ হোসেন আঞ্জু, মনোয়ার হোসেন ও আব্দুল মতিন বলেন, এখানে প্রাক্তন খতিবকে বাদ দেওয়ার জন্য মসজিদ কমিটির সভাপতি রোস্তম আলী সহ দুটি পরিবারের লোক ষড়যন্ত্র করছে। প্রাক্তন খতিবকে বদলাতে হবে এটা নাকি তাদের পারিবারিক সমস্যা ? প্রশাসনের কথা মেনে নামাজ পড়তে গেলে সভাপতির পক্ষের লোকজন এ ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
অপরদিকে মসজিদ কমিটির সভাতি রোস্তম আলী বলেন, প্রাক্তন খতিব গত বছর থেকেই তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর চাচ্ছেন। এমনকি গত ১৫ তারিখেও তিনি মুসুল্লীদের সামনে উনার শেষ জুম্মাহর নামাজ বলে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু এলাকার কিছু মুসুল্লী প্রাক্তন খতিবকে জোরপূর্বক রাখতে চায়। এটা এক ধরনের ষড়যন্ত্রের আভাস। এরপরেও প্রশাসনের কথা মেনে আমরা চলছি। কিন্তু তাঁরা নতুন খতিবকে নিয়ে টানাটানি সহ এ ধরনের হামলা চালায়।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ উক্ত সংঘর্ষের ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, বিয়ষটি অতীব দু:খজনক। বর্তমানে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।