নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন যেন এখন কোনো নতুন বিষয় নয় বিশেষ করে পুলিশের হাতে সাংবাদিক নিপীড়নের চিত্র ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। যশোরের বাঘারপাড়া থানায় এবার ঘটে গেলো এক চরম লজ্জাজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা সাংবাদিক হৃদয় হাসানকে ডেকে নিয়ে তার গায়ে থাকা ‘প্রেস’ কটি ছুড়ে ফেলে দেন ওসি নিজেই। এরপর সাজানো মামলায় তাকে পাঠানো হয় কারাগারে।
ঘটনার সূত্রপাত বাঘারপাড়ার চাড়াভিটা বাজারে সাংবাদিক রিদয় হাসানের একটি টিকিট কাউন্টার রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সেখানে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিল চাঁদা না দিলে সম্প্রতি তারা হামলা ও লুটপাট চালায় পরবর্তীতে সাংবাদিক হৃদয় হাসান এসে সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন।
তবে ভিডিও প্রকাশের আগেই থানা পুলিশ তাকে ডেকে নেয়। অভিযোগ, ওসি নিজ হাতে হৃদয়ের গায়ে থাকা ‘প্রেস’ লেখা কটি খুলে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেন। এরপরই নাটকীয়ভাবে তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে পাঠানো হয় যশোর জেলা কারাগারে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঘারপাড়ায় সাংবাদিক মহলসহ সচেতন নাগরিক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে দৈনিক চেতনায় বাংলাদেশ পত্রিকার চেয়ারম্যান কে এম মোজাপ্ফার হুসাইন বলেন
প্রেস কটি ছিঁড়ে ফেললে কি সত্য থেমে যাবে? আমি বিস্মিত, ব্যথিত এবং গভীরভাবে ক্ষুব্ধ!
একজন সাংবাদিকের গায়ে থাকা ‘প্রেস’ লেখা কটি ছিঁড়ে ফেলে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানো এটা শুধু একটি ব্যক্তিকে নয়, পুরো সাংবাদিকতা পেশাকেই অপমান করার নামান্তর। যশোরের বাঘারপাড়ায় যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা শুধু রিদয় হাসানের সঙ্গে নয়, এটা ঘটেছে বাংলাদেশের প্রতিটি সাহসী সাংবাদিকের সঙ্গে।
আজ যে সাংবাদিক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, তার বিরুদ্ধে পুলিশই মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে নিস্ব করে দিলো! ‘প্রেস’ লেখা কটি টেনে খুলে ফেলা শুধু কাপুরুষতা নয়, এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এক ভয়ঙ্কর রূপ।
আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই এই দেশ কি আর সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ? আমরা কি কলম চালানো বন্ধ করে দেব? নাকি আমরা আরও সাহসী হব, আরও সংগঠিত হব?
আমি দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই এই অন্যায়ের জবাব আমরা দেব। এই অপমানের বিচার চাই আমরা, শুধু একজন সাংবাদিকের জন্য নয়, পুরো গণতন্ত্রের স্বার্থে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের শাস্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, এবং সাংবাদিক রিদয়ের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে
▶ জেলা প্রশাসক, ▶ পুলিশ সুপার, ▶ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করবো।আমরা মানববন্ধন করবো, প্রতিবাদ সভা করবো, প্রয়োজনে জাতীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার দ্বারস্থ হবো।
কারণ ‘প্রেস কটি’ শুধু একটি জামা নয় এটি সত্য বলার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহসিক প্রতীক।
জেমস আব্দুর রহিম রানা নির্বাহী সম্পাদক | দৈনিক চেতনায় বাংলাদেশ বলেন
সাংবাদিক রিদয় হাসানের ওপর পুলিশের এ বর্বরতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এটা সাংবাদিকতার মুখে থাপ্পড়। একজন ‘প্রেস’ পরিচয়ধারী সাংবাদিককে গায়ের কটি খুলে ছুড়ে ফেলা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। দোষী পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং রিদয়ের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। সাংবাদিকতা থামবে না। আমরা লিখবো, প্রতিবাদ করবো, জবাব নেবো।
‘দৈনিক লিখনী সংবাদ’ পত্রিকার সম্পাদক মোঃ রানা আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, “একজন পেশাদার সাংবাদিকের প্রেস কটি টেনে খুলে ফেলা মানে পুরো সাংবাদিক সমাজকে অপমান করা। এটি শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের ইঙ্গিত বহন করে।”
তিনি জানান, এ ঘটনায় যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তার ভাষায়, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো দলের নয়। এখানে পুলিশ কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করতে পারে না এটি অসাংবিধানিক এবং বিপজ্জনক নজির।”
দৈনিক জাগ্রত বাংলাদেশ অনলাইন পোর্টালের প্রকাশক-সম্পাদক ও অভয়নগর প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন এক বার্তায় জানান, সাংবাদিক হৃদয় হাসানের প্রেস কর্টি ছুড়ে ফেলে পুলিশ অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে, আমি ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ হৃদয় হাসানের বিরুদ্ধে মামলা প্রতাহার করতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ তীব্র আন্দোলনসহ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। তিনি এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
অন্যদিকে, স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠন, দৈনিক লিখনী সংবাদ, গাঙচিল টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে ওসি’র অপসারণ, নিরপেক্ষ তদন্ত ও সাংবাদিক রিদয়ের নিঃশর্ত মুক্তি।
ঘটনার ভয়াবহতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন “আজ যদি একজন সাংবাদিক নিরাপদ না থাকেন, কাল জনগণই বিপন্ন হবে। প্রেস কটি ছুড়ে ফেলার বিষয়ে বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফকির তাইজুর রহমানের 01320143258 নং মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।