প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ
মোঃমামুন নীলফামারী প্রতিনিধি।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ নাউতারা আবিউন্নেছা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা: নাসিরা আক্তারের বিরুদ্ধে গত দশ বছর ধরে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন যে তিনি তাঁদের উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ নিজের মনগড়া ও গোপনে তৈরি করা একটি কমিটির মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন এবং বিভিন্ন ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষিকা নাসিরা আক্তার, যিনি সাবেক ডিমলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তবিবুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরিচুত্য শিক্ষক সাইফুল ইসলাম লেনিনের স্ত্রী, তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষক-কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। নাসিরা আক্তার স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী উপজেলা নেত্রী এবং বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী বাড়িতে বসবাস করায় কাউকে পরোয়া করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা যেমন – সেশন ফি, টিউশন ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ ফি, প্রবেশপত্র ফি, প্রশংসাপত্র ও সনদের টাকা, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফি, বিদ্যালয়ের পুরোনো বই-খাতা বিক্রির টাকা, উপবৃত্তির ফরম বিতরণের টাকা এবং শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন – এসবই তিনি সুকৌশলে মনগড়া কমিটির মাধ্যমে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রায় ১২০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রতিজন শিক্ষার্থীর সেশন ফি ৮০০ টাকা এবং সপ্তম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এত বিশাল অঙ্কের আয় থাকা সত্ত্বেও গত দশ বছরে শিক্ষক-কর্মচারীদের টিউশন ফি বাবদ মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এমনকি এই টিউশন ফির সমস্ত টাকা প্রধান শিক্ষকের নিজস্ব তৈরি করা সভাপতির মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে মাত্র ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা জমা রয়েছে, যেখানে টিউশন ফির সম্পূর্ণ টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্য বলে দাবি করা হয়েছে।
শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের ন্যায্য টিউশন ফির টাকা চাইতে গেলে প্রধান শিক্ষক তালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করেন। এছাড়াও, তিনি সরকারি কোন বিধি মোতাবেক কাজ করছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক সেশন ফির অন্তর্ভুক্ত স্কাউট ও ক্রীড়া ফি বাবদ প্রতিজন ১৩০ টাকা এবং ধর্মীয় ফি বাবদ প্রতিজন ১০০ টাকা নেওয়া হলেও এই টাকা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্রীড়া শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষকের যৌথ অ্যাকাউন্টে রাখা হয়নি।
আরও জানা গেছে, বিগত পাঁচ বছর ধরে বিদ্যালয়টিতে কোনো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। সরকারি বিধি অনুসারে বর্তমানে একটি শাখায় ৫৫ জন শিক্ষার্থী থাকার নিয়ম থাকলেও প্রধান শিক্ষক সরকারি কোনো নিয়ম মানছেন না এবং প্রতিটি শাখায় ১২০ থেকে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও, তিনি সরকারি রুটিন না মেনে নিজস্ব রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পরিচালনা করছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক নাসিরা আক্তার বলেন, “সরকারি বিধি মোতাবেক সবকিছুই করা হচ্ছে। বিধির বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি, একটি তদন্ত কমিটি করে এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা এ বিষয়ে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, অভিযোগপত্রের অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চল রংপুর, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে।