
রংপুর অফিস
পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক আমার দেশ-এর স্টাফ রিপোর্টার ও রংপুর অফিস প্রধান বাদশাহ ওসমানীসহ সাংবাদিকদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইন—এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রংপুরের সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ প্রকাশে ক্ষুব্ধ পুলিশ প্রশাসন
জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের বিভিন্ন অনিয়ম, নির্যাতন ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে দৈনিক আমার দেশ ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে আসছে। এসব সংবাদের মধ্যে রয়েছে—সাধারণ জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলাতে চাপ প্রয়োগ, ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও ঘুষ বাণিজ্য।
এই ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশে ক্ষিপ্ত হয়ে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইন সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হুমকির বিবরণ
বাদশাহ ওসমানী জানান, চলতি মাসের ১১ ডিসেম্বর আমার দেশ অনলাইন-এ
‘ঘুষের টাকা না দেওয়ায় খুনের আসামি’
শিরোনামে গঙ্গাচড়া মডেল থানার এসআই উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সংবাদটি প্রকাশের পর রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন নবাগত পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইনকে।
১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার তদন্তের জন্য গঙ্গাচড়া থানায় যান। এ সময় তদন্তের অগ্রগতি জানতে হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন। পরে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ পাঠানো হলে তিনি ফোন ব্যাক করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে আর একটি নিউজ করলেই তোমাকে দেখে নেওয়া হবে। আমি রংপুরে বদলি হয়েছি তোমাদের দেখার জন্য।
এ হুমকির পর নিজের ও সহকর্মী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানান বাদশাহ ওসমানী। সাংবাদিক সমাজের তীব্র প্রতিক্রিয়া
রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস শাহেদ মন্টু বলেন,
বাদশাহ ওসমানী কেমন সাংবাদিক তা পুলিশ সুপারকে দেখার দরকার নেই। সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা রাস্তায় নামবো।
রংপুর বিভাগীয় প্রধান লিয়াকত আলী বাদল বলেন,
এই পুলিশ সুপারের আচরণ সাংবাদিকবান্ধব নয়। এমন কর্মকর্তাকে রংপুরে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, গঙ্গাচড়ায় ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য নিতে গেলে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“বাদশাহ ওসমানী একজন পরীক্ষিত ও নির্যাতিত সাংবাদিক। অতীতের মতো বর্তমান পুলিশ সুপারও তাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। এটি আমরা মেনে নেবো না। দিনাজপুরেও একই অভিযোগ
জানা গেছে, মারুফত হোসাইন দিনাজপুরে পুলিশ সুপার থাকাকালীনও সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। দিনাজপুরের একাধিক সাংবাদিক জানান, তার আচরণের কারণে তারা তাকে এড়িয়ে চলতেন। পুলিশ সুপারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি
এ বিষয়ে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপেও কোনো জবাব দেননি।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন,
বিষয়টি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আমাকে জানিয়েছেন। পুলিশ সুপার বর্তমানে রাজশাহীতে নির্বাচনি ট্রেনিংয়ে আছেন। তিনি ফিরে এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।