
নিজস্ব প্রতিবেদক
নৌপরিবহন খাতে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই, এমন মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। আজ বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পাবলিক পরিবহন ও পাবলিক প্লেস শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আরো শক্তিশালী করতে হবে” শীর্ষক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল এডভোকেটস (বিটিসিএ) ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)। তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ দোয়া বখশ শেখের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে স্বাগত বক্তব্য দেন আর্থ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী আমিনুল ইসলাম বকুল। পরিচালনা করেন বাটার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী ও প্রত্যাশা, মাদকবিরোধী সংস্থার সভাপতি হেলাল আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বিটিসিএ সচিবালয়ের প্রতিনিধি ফারহানা জামান লিজা, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবু নাসের অনিক, পরিবেশবাদী ও উন্নয়নকর্মী উম্মে জান্নাত কনি, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ ও মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু, পরিবেশকর্মী সামিউল হাসান সজীব, ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. নয়ন ও ফেরদৌস হোসেন।
বক্তারা বলেন, দেশের নৌপরিবহন ব্যবস্থায় প্রতিদিন ১০–১২ লাখ যাত্রী চলাচল করেন। লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট ও নদীবন্দর এলাকায় ধূমপানের কারণে নারী, শিশু, শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ যাত্রীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। পরোক্ষ ধূমপান হৃদরোগ, স্ট্রোক ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মনে করেন, শক্তিশালী আইন, কঠোর তদারকি এবং ব্যাপক জনসচেতনতা ছাড়া নৌপরিবহনকে নিরাপদ ও ধূমপানমুক্ত করা সম্ভব নয়।
বক্তারা আরও বলেন, আইনের দুর্বলতা ও পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে নদীবন্দর এলাকায় তামাক কোম্পানিগুলো এখনো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে—যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি। বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে নৌপরিবহন খাতকে দ্রুত শতভাগ ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করার দাবি জানান তারা।
সভাপতি দোয়া বখশ শেখ বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিটি পরিবহনে “ধূমপান হইতে বিরত থাকুন, ইহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এমন সাইনেজ দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চে এর বাস্তবায়ন নেই। তিনি লঞ্চ মালিকদের নিজ উদ্যোগে এটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে যাত্রী ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, টার্মিনালে যত্রতত্র সিগারেটের দোকান বন্ধ করা এবং সার্বিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মানববন্ধনে লঞ্চ মালিক সমিতি, কাউন্টার ম্যানেজার, শ্রমিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় গৃহীত সুপারিশসমূহ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত তদারকি জোরদার করা।
সকল নদীবন্দর, লঞ্চ ও ফেরিতে বাধ্যতামূলকভাবে ধূমপানমুক্ত এলাকা সাইনেজ স্থাপন।
নৌযান ও টার্মিনালে তামাকজাত পণ্য বিক্রয়, সরবরাহ ও ব্র্যান্ড প্রচারণা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
নৌযান মালিক, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে পরোক্ষ ধূমপানমুক্ত পরিবহনব্যবস্থার আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা।