
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত প্রান্তিক পোল্ট্রি উৎপাদন বর্তমানে চরম সংকটের মুখোমুখি। ডিম ও ব্রয়লার শিল্প দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং আয়ের অন্যতম উৎস হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাজার ধস, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং অসাধু চক্রের দাপটের কারণে খামারিরা ভয়াবহ লোকসান ভুগছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রান্তিক খামারিরা প্রতি ব্যাচে শতকরা ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত লোকসান করছেন। ফিডের দাম বাড়লেও ডিম ও মুরগির বাজারদর কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। অনেকেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে খামার বন্ধ বা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কন্ট্রাক্ট গ্রোয়িং ব্যবস্থাও খামারিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বড় কোম্পানি বাচ্চা, খাদ্য ও ঔষধ সরবরাহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও খামারির লাভ সীমিত। বাজারে মূল্য ধস হলে সাধারণ খামারির উৎপাদিত মুরগির দাম কমে যায়, কিন্তু ভোক্তা একই বা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হন। এর ফলে মধ্যস্বত্বভোগীর লাভ বাড়ে, উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সংকটের মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বাজারের অগোছালো সাপ্লাই চেইন, অসাধু সুযোগ–সন্ধানী, অতিরিক্ত DOC উৎপাদন এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা উল্লেখ করেছেন। সরকারিভাবে বাজার মনিটরিং, ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ, আমদানি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগের অভাব পুরো খাতকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।
সমস্যার সমাধানের জন্য প্রান্তিক খামারির বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ, ফিড ও DOC-এর দাম মনিটরিং, সুযোগ–সন্ধানী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং খামারি–কেন্দ্রিক আধুনিক বিপণন ব্যবস্থা জরুরি। ত্রিপক্ষীয় স্বচ্ছ কন্ট্রাক্ট, সরকারি নজরদারি ও প্রসেসিং শিল্প শক্তিশালী করা হলে বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।
পোল্ট্রি খাত বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু সময়মতো যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ না করলে খাত দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পড়তে পারে, যার ফলে খামার বন্ধ, বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় কোম্পানির দাপট এবং ভোক্তার জন্য দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেবে।
লেখক: জেমস আব্দুর রহিম রানা, সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী, কলামিস্ট ও স্বত্বাধিকারী – রোহান পোল্ট্রি এন্ড এগ্রো ফার্ম লিঃ, যশোর।