
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: আনোয়ার সাঈদ তিতু
কুড়িগ্রামসহ পার্বত্য ও সীমান্তঘেঁষা উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার রাত থেকেই শীতপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। কুড়িগ্রাম শহর ও আশপাশে সকাল হলেও সূর্য দেখা যাচ্ছে না, ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনের দৃশ্যমানতা কমে গেছে। ফলে মানুষকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে, যা কর্মজীবী ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, ঠান্ডার তীব্রতা আরও বাড়তে পারে এবং সামান্য থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ, খেটে–খাওয়া দিনমজুর, রিকশাচালক ও কৃষকরা শীতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত। মোঃ আজিজ মিয়া (৬০) বলেন, “ঠান্ডায় কাজ করতে পারছি না, কিন্তু না করলে খাবার পাবো না। হাতে-পায়ে ব্যথা সত্ত্বেও বের হতে হচ্ছে।” রিকশাচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম (৫০) জানান, “শীতে রাস্তায় লোক কম। রিকশা চালালেও ভাড়া নেই, সংসার চলবে না। চিন্তায় আছি।”
শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চরাঞ্চল, নদীতীরবর্তী নিম্নভূমি ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ চাদর, কম্বল ও পোশাক বিতরণ করছে। তবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সহায়তা যথেষ্ট নয়।
সদর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, চিলমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী এলাকায় জমে থাকা কুয়াশার কারণে যোগাযোগ ধীর। বাস, ট্রাক, থ্রি-হুইলার চালকরা জানান, দৃশ্যমানতা মাত্র ২০–৩০ মিটার হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
চরাঞ্চলে নদীর ধারে বসবাসরত মানুষরা রাতে আগুন জ্বালিয়ে গরম নিচ্ছেন। ভিজে কাপড় শুকাতে না পারায় ঠান্ডা আরও অনুভূত হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে শীতবস্ত্র বিতরণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘস্থায়ী শীতপ্রবাহে দরিদ্র মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে ঘন কুয়াশার মধ্যে বাড়ির বাইরে কাজ করছেন কৃষক ও স্থানীয়রা।