
অভয়নগর প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগর উপজেলা ভূমি অফিস নিয়ে মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। জমিজমার কাজ করতে গেলে অফিস সহকারী কাম-পেশকার দেলোয়ার হোসেনের ঘুষ-বাণিজ্যের শিকার না হয়ে কেউ বের হতে পারছে না এমন অভিযোগ বহুদিনের। মানুষ বলছে, তাঁর কাছে না গেলে যেন অফিসের কোনো ফাইলই সামনে এগোয় না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় তিন বছর আগে দেলোয়ার এই অফিসে যোগদানের পর থেকে পুরো চিত্রটাই যেন পাল্টে গেছে। সহজ সরল কৃষক, দিনমজুর, বিদেশফেরত শ্রমিক বা বয়স্ক জমির মালিক সবার কাছেই তিনি একই কৌশল ব্যবহার করছেন। কেউ নামজারি, ওয়ারিশ সনদ, জমাভাগ বা রেকর্ডের ছোটখাটো সংশোধন নিয়ে গেলে দেলোয়ার প্রথমেই বলেন পেপারে ত্রুটি আছে, কাজটা ঝুঁকিপূর্ণ… সময় লাগবে। এর পরেই শুরু হয় তাঁর পরিচিত খেলা।
সমাধানের দোহাই দিয়ে অনৈতিক সুবিধা দাবি। যারা দিতে রাজি হয়, তাদের ফাইল দ্রুত চলে যায় সহকারী কমিশনার (ভূমি)–এর টেবিলে। আর যারা ঘুষ দিতে না পারে, তাদের ফাইল দিনদিন, সপ্তাহে সপ্তাহে, এমনকি মাসেও নড়ে না।
ভুক্তভোগীরা বলছে, দেলোয়ার নিজের প্রভাব ব্যবহার করে এমনভাবে ফাইল সাজান যে সহকারী কমিশনারের কাছে বিষয়টি “ঝুঁকিপূর্ণ” মনে হয়। ফলে তিনি স্বাক্ষর করেন না। এভাবে অফিসের প্রশাসনিক চক্রের মধ্যেই আটকে থাকে সাধারণ মানুষের কষ্টের ফাইল। একজন ভুক্তভোগীর ভাষায়, দেলোয়ারকে টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না। তিনবার গেছি, তিনবারই নতুন নতুন ত্রুটি দেখিয়েছে। শেষে বললো ব্যবস্থা করে নেন। টাকা না দিলে অফিসে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকে না। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। আমার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। অভিযোগ নিয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও অভয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল ফারুকী ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দিন দিপু বলেন এ বিষয়ে কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখবো। অভয়নগরের এই চিত্র নতুন নয়, কিন্তু দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ভূমি অফিসগুলোর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি সংস্কৃতির বাস্তব উদাহরণ। নামজারি বা রেকর্ড সংশোধনের মতো মৌলিক সেবা যা একজন নাগরিকের অধিকার তা আজ ঘুষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ কাগজপত্র সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ায় দেলোয়ারের মতো কর্মচারীরা ‘ত্রুটি’ শব্দটিকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। প্রশাসনিক তদারকি দুর্বল হওয়ায় তাঁদের দাপট আরও বেড়ে গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন জেলা প্রশাসক সরাসরি তদন্ত করলে পুরো চিত্র বেরিয়ে আসবে। জমির জন্য মানুষকে এক বছর দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, আর দেলোয়ারের হাত পেরোলে কয়েক ঘণ্টায় ফাইল শেষ হয়ে যায়। সবার প্রত্যাশা একটি স্বচ্ছ তদন্ত হোক, এবং ভূমি অফিস আবার মানুষের আস্থা ফিরে পাক।