বাগেরহাটের কচুয়াতে গজালিয়া প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা জুলেখা বিলকিস বিগত এক বছরে ক্লাস করেছেন মাত্র ৬৩ দিন। ছুটি কাটাচ্ছেন নিয়ম বহির্ভূতভাবে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষিকা পদে জুলেখা বিলকিস ২০০৪ সালে বিষেরখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম যোগদান করেন পরে ফকিরহাট এরপর ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি গজালিয়া স্কুলে বদলি পরবর্তী যোগদান করেন। ২০২৪ সালের দিকে শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা টালবাহানা দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। স্কুলের হাজিরা খাতা যাচাই সাপেক্ষে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষিকার পাঠদান কৌশল ভালো হলেও তিনি নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। আসলেও তাড়াতাড়ি শেষ করে চলে যান। এতে বাচ্চাদের পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষিকার এই ধরনের আচরণের কারণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। তারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
সহকারী শিক্ষক মোঃ হাসিবুর রহমান বলেন, “কচুয়া উপজেলার মধ্যে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ এখানে প্রাক প্রাথমিকসহ মোট ৬ টি ক্লাস রয়েছে প্রতিটি ক্লাসে আলাদা শাখা রয়েছে। ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য একজন শিক্ষকের নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহীদুর রহমান বলেন, “বিষয়টি তার নজরে আছে। কোনো ধরনের লিখিত ছুটি ছাড়াই তিনি দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত আছেন। একাধিকবার তাকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন কথার তোয়াক্কা না করে মাঝে মাঝে দু-এক সময় মেডিকেল সনদ জমা দিয়ে দিনের পর দিন ছুটি কাটিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে দুই মাস যাবত তার বেতন বন্ধ রয়েছে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকা জুলেখা বিলকিস বলেন, “আমি ৩-৪ বছর ধরে অসুস্থ আছি। নানা উপসর্গ নিয়ে আমি বাগেরহাট খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছি। লিখিত কোনো ছুটি আমি নেইনি, এটা আমি অপরাধ করেছি। আমার দুই মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। মূলত আমি দেরিতে যাই এজন্য স্যার আমার উপর একটু অসন্তুষ্ট থাকেন।”
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শেখ বদিউজ্জামান বলেন, “আমি শুনেছি তিনি দীর্ঘদিন নাকি অসুস্থ আছেন। আপনারা অনুসন্ধান করে দেখেন মূল বিষয় কি।”
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মির্জা মিজানুল আলম বলেন, “আমি ২ মাস তার বেতন বন্ধ রেখেছি। আমি এখানে মার্চের ৯ তারিখ এসেছি, আমার জানামতে এপ্রিল মাস থেকেই তিনি অনুপস্থিত আছেন। আমি আসার পর থেকে উনি কোন বেতন ভাতা পাননি। আগে কোন প্রক্রিয়ায় ছুটি নিয়েছেন জানি না, তবে আমার সময় উনি স্কুলে যান না। মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া আছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগদান করতে পারবেন। এছাড়া ওনার অনুপস্থিত সময় যখন ৯০ দিন হবে তখন তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। চিঠি দিয়ে ৩ বার কারণ দর্শানোর পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। তিনি বর্তমানে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত আছেন।”