তন্ময় দেবনাথ স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সদরে সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপারেশনের পরে মালেকা বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ( ২৬ জুলাই) সকাল ৯ টার দিকে ক্লিনিক প্রতিপক্ষ রোগীর স্বজনদের রোগীকে রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে মৃত্যুর খবরটি জানাজানি হয় বলে জানা যায়।
মৃত মালেকা বেগম (৬০) বাঘা পৌরসভার উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের খোরশেদ আলীর স্ত্রী।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জুলাই শুক্রবার রাত ২টার দিকে মালেকা বেগমের জরায়ুর সমস্যার কারণে সেবা ক্লিনিকে অপারেশন করানো হয়। অপারেশনের পর থেকেই তিনি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলা করে। এর পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার চিত্র দেখিয়ে স্বজনদের শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু এবিষয়ে স্বজনদের সন্দেহ হলে তারা জানতে পারে মালেকা বেগম তিন থেকে চার ঘণ্টা আগেই মারা গেছেন।ঘটনাটি জানা জানি পর স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। এতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যায় এবং স্থানীয়রা ক্লিনিকটি তে তালা ঝুলিয়ে দেয়। একইসঙ্গে ভেতরে থাকা অন্য ২টি অপারেশনের রোগীকেও বের করে দেওয়া হয়।
এদিকে অবস্থার বেগতিক দেখে বাঘা থানা পুলিশের জরুরী পুলিশটিম এসআই রবিউল ইসলামসহ সঙ্গীয় ফোর্স ও উপজেলা বিএনপি নেতা মুখলেছুর রহমান মকুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেবা ক্লিনিকটি দীর্ঘদিন ধরেই অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ পরিবেশে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। একটি ক্লিনিক এর এর যে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য যে শর্তগুলো রয়েছে তার অধিকাংশই নেই এই ক্লিনিকে। গত কয়েক বছরে একাধিক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এই প্রতিষ্ঠানে।
এ বিষয়ে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে ক্লিনিকের মালিক জিল্লুর রহমান বলেন, রাত ২টার দিকে ৩ জন অভিজ্ঞ সিনিয়র ডাক্তার কয়েকটি রোগীর অপারেশন করেন। অপারেশনের পরে রোগীরা ভালো ছিলো। আমি অপারেশন শেষে রাত ৪ টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। পরে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।
এদিকে মৃত রোগীর স্বজনদের কোন অভিযোগ না থাকায় মৃতদেহটি গতকাল দাফন সম্পুর্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে এই বিষয়ে লিখিত কোন অভিযোগ কেউ করেনি। ঘটনার পর থেকে ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। ক্লিনিক খুললে তদন্ত টিম গঠন করে বিষয়টা দেখা হবে।
এ বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, আমি বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই জানলাম। এ ঘটনায় মৃত রোগীর স্বজনদের কেউ কোন অভিযোগ করেনি থানায়। অভিযোগ করলে আইনিপদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সচেতন মহলের দাবী , ক্লিনিক অপারেশন এর সময় বা পরে রোগী মারা যায়। পরিবারের অভিযোগ না থাকলেই কি দায় শেষ হয়ে যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিৎ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে নিয়মিত তদারকির পাশাপাশি অভিযান পরিচালনা করা।