আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের প্রিয় গ্রহ পৃথিবী নাকি আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে ঘুরতে শুরু করেছে! এর ফলে দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি দিনই সামান্য কমে আসছে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঢাকা, ১৩ জুলাই ২০২৫: আমাদের চেনাজানা দিনগুলো কি ছোট হয়ে আসছে? বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা কিন্তু তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘লাইভ সায়েন্স’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে ঘুরছে। এর ফলস্বরূপ, ২৪ ঘণ্টার দিনের দৈর্ঘ্য থেকে প্রতি দিনই কমে যাচ্ছে কয়েক মিলিসেকেন্ড।
কেন এমন হচ্ছে?
সাধারণত, পৃথিবীর আহ্নিক গতি সবসময় এক থাকে না। চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষীয় প্রভাব, পৃথিবীর অভ্যন্তরের গলিত কোর বা কেন্দ্রের গতিবিধি এবং মহাসাগরের জোয়ার-ভাটা – এমন অনেক প্রাকৃতিক বিষয় পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিকে প্রভাবিত করে। ঐতিহাসিকভাবে, পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমছিল। প্রায় ২০০ কোটি বছর আগে এক দিনে ১৯ ঘণ্টা সময় ছিল! কিন্তু ২০২০ সাল থেকে বিজ্ঞানীরা এক নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করছেন। তারা দেখেছেন, পৃথিবী দ্রুত গতিতে ঘুরতে শুরু করেছে।
রেকর্ড ভাঙা ছোট দিন!
বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট কিছু দিনের কথা উল্লেখ করেছেন, যখন এই পরিবর্তন বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ জুলাই ছিল রেকর্ড করা সবচেয়ে ছোট দিন। সেদিন একটি দিনের দৈর্ঘ্য স্বাভাবিক ২৪ ঘণ্টার চেয়ে প্রায় ১.৬৬ মিলিসেকেন্ড কম ছিল। আর সম্প্রতি, ৯ জুলাই, ২০২৫ তারিখেও দিন প্রায় ১.৩ থেকে ১.৫১ মিলিসেকেন্ড কম ছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আগামী ২২ জুলাই এবং ৫ আগস্টেও একইরকম ছোট দিন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব কী?
যদিও এই পরিবর্তন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি কোনো বড় প্রভাব ফেলবে না, কারণ এই পার্থক্য এতটাই সূক্ষ্ম যে তা অনুভব করা অসম্ভব। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিশ্বের সময় নির্ধারণকারী সংস্থাগুলোর (যেমন ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেম সার্ভিস – IERS) কাছে এই পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভুল সময় গণনা, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং এবং মহাকাশ গবেষণার জন্য এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো আমলে নেওয়া জরুরি। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে, তবে ২০২৯ সালের মধ্যে সময়ের হিসাবে ‘লিপ সেকেন্ড’ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, যা বর্তমান বৈশ্বিক সময় পদ্ধতিকে আরও নিখুঁত রাখবে।
পৃথিবীর এই রহস্যময় আচরণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা আরও গভীরে গবেষণা করছেন। এর পেছনের সুনির্দিষ্ট কারণগুলো খুঁজে বের করা এবং ভবিষ্যতে এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা গেলে মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।