খুলনা প্রতিনিধি।।
খুলনার ফুলতলা উপজেলার শিকির হাটের নদীর ঘাটসংলগ্ন এলাকায় চোরাই গরুর গোশত বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে মনা কসাই ও তার ছেলে মিরাজ কসাই। দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করলে স্থানীয় জনতা সন্দেহবশত দোকানে হানা দিয়ে তাদেরকে আটক করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পাপিয়া সুলতানা। তিনি মনা কসাইয়ের দোকান থেকে প্রায় ১০০ কেজি পঁচা ও চোরাই গরুর গোশত জব্দ করে বাজেয়াপ্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, শিকির হাটের ওই দোকানে বাজার মূল্যের তুলনায় কম দামে (প্রতি কেজি ৫০০ টাকা) গোশত বিক্রি করছিলেন মনা ও মিরাজ। সাধারণ ক্রেতারা গোশতের দুর্গন্ধ ও অস্বাভাবিক দাম দেখে সন্দেহ প্রকাশ করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে কোনো সঠিক উত্তর না পেয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে এসে দেখে, গোশত দোকানের সামনে জনতার ভিড়। ভোক্তাদের অভিযোগ ছিল, এই গোশত খাদ্য অনুপযোগী ও দুর্গন্ধযুক্ত। এসিল্যান্ড পাপিয়া সুলতানা তৎক্ষণাৎ গোশত বাজেয়াপ্ত করেন এবং বিক্রির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এদিকে স্থানীয় জনগণের একাংশ অভিযোগ করেছে, ফুলতলা থানার কিছু অসৎ পুলিশ সদস্যের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে একটি গরু চোর সিন্ডিকেট গোপনে সক্রিয় রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনার নেপথ্যে ফুলতলা থানার ওসি জিল্লাল হোসেনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এ বিষয়ে ওসি জিল্লাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, "আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনা থেকে চোরাই গরু উদ্ধার করি এবং গরু জবাইয়ের পর তিনজন চোরকে হাতেনাতে গ্রেফতার করি। উদ্ধারকৃত গোশতের একটি অংশ আদালতের নির্দেশে বিক্রির জন্য মনাকশাইয়ের দোকানে রাখা হয়। কিন্তু বিক্রির শেষ পর্যায়ে অবশিষ্ট ১০০ কেজি গোশত পঁচে যাওয়ায় তা বাজেয়াপ্ত করা হয়।"
গ্রেফতারকৃত চোরদের মধ্যে রয়েছে:
মোঃ রাসেল (৩৫), পিতা দেলোয়ার খান, সাং: বানকাইজ, থানা: লৌহজং, জেলা: মুন্সীগঞ্জ।
খোকন খাঁ, পিতা ইউনুস খান, গল্লামারি, খুলনা।
বাবুল শেখ, পিতা হাসান শেখ, সাং: তেপারা, জেলা: বাগেরহাট।
তাদের বিরুদ্ধে ফুলতলা থানায় চুরি মামলা দায়ের করা হয়েছে (মামলা নং: ফুলতলা থানা ০৪)।
এদিকে, গত মঙ্গলবার ধোঁপাখোলা এলাকা থেকে পাঁচটি গরু চুরি হলে এক মালিক ফুলতলা থানায় জিডি করেন। তিনি দাবি করেন, জব্দ করা তিনটি গরুর গোশতের মধ্যে একটি তার কালো রঙের গরু।
ওসি জিল্লাল হোসেন বলেন, “আমরা চোর সিন্ডিকেটকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”
এ ঘটনায় জনমনে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের দাবি, চোরাই গোশত বিক্রির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য কঠোর নজরদারি ও অভিযান জোরদার করা হোক।